চীনের কড়া হুঁশিয়ারি স্বত্বেও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর
চীনের কড়া হুঁশিয়ারি স্বত্বেও স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফর; মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি চীন কে যুদ্ধের দিকে ধাবিত করছে এবং চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ কি আসন্ন?
বেশ কিছুদিন ধরে তাইওয়ান ইস্যু তে চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনা চলছিল এবং এক ফোনালাপে চীন আমেরিকা কে বলেছে আগুন নিয়ে খেললে পুড়তে হবে। গত ২৫ বছরের মধ্যে এই চীনের তৃতীয় ক্ষমতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি তাইওয়ান সফরে গেছেন এবং এ বিষয়টি চীনের জন্য খুব উদ্বেগের। আগস্টে মার্কিন স্পিকারের তাইওয়ান সফরের কথা শোনা যাচ্ছিল কিন্তু নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়েছিল না। হঠাৎ করে স্পিকারের সফরের শুরু হয়েছে এমনটি শোনা যায় এবং সর্বপ্রথম সিঙ্গাপুর এসে পৌঁছায়। এরপর মঙ্গলবার রাতে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর বিমান বন্দর থেকে যাত্রা শুধু করে তাইওয়ানের স্থানীয় সময় অনুযায়ী ১০ টা ৪৪ মিনিটে অবতরণ করে ন্যান্সি পেলোসিকে বহন করা উড়োজাহাজ। তাইওয়ানের পূর্বাঞ্চলের জলসীমায় একটি যুদ্ধবিমানবাহী রণতরিসহ চারটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে চীন। আকাশে চক্কর দিয়েছে চীনা রাশিয়া ও চীন যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে বলেছে, পেলোসির সফর উসকানিমূলক এবং তা এ অঞ্চলের জন্য অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করবে।
তাইওয়ানে পৌঁছানোর পর টুইট করে পেলোসি বলেন, তাঁর প্রতিনিধিদলের সফর ‘তাইওয়ানের গতিশীল গণতন্ত্রের’ প্রতি আমেরিকার অবিচল প্রতিশ্রুতিকে সম্মানিত করেছে।
স্পিকার পেলোসি লিখেছেন, তাইওয়ানের ২ কোটি ৩০ লাখ মানুষের সঙ্গে আমেরিকার সংহতি আজ আগের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর সফর কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী নীতির বিরোধিতা করে না। এদিকে পেলোসি যে হোটেলে থাকবে তার বাহিরে চীনপন্থী লোকজন বিক্ষোভ করেছেন।
এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র এবং চীন দক্ষিণ চীন সাগরে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির পাশাপাশি আরকটি বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার পথে যেন হাঁটছে বিশ্ব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিশ্বে জ্বালানি সংকট, মূল্যস্ফীতি সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে, গোটা বিশ্ব এই যুদ্ধের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান এবং প্রক্রিয়া পাল্টেছে। এমন সময়ে আরেকটি যুদ্ধের হাতছানি বিশ্ব কে কোন পর্যায়ে নিয়ে যাবে সেটা এখনই বলা মুশকিল। চীন-যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। ইতোমধ্যে, চীন সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে এবং চীন তাদের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। চীন তাইওয়ান কে তাদের নিজেদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে মনে করে এবং তাইওয়ানে বসবাসকারী লোকজন তাদের নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে দাবি করে। চীন সরকার যদিও তাইওয়ান কে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে মানে এবং তাইওয়ান নিজেদের মতো করে পরিচালিত হচ্ছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যে আবার নতুন করে গতি পেয়েছে তাইওয়ান ইস্যু।
বলা হচ্ছে যে, চীনের উদীয়মান অর্থনীতি হয়তো বিশ্বে এক নাম্বার অর্থনীতির দেশের দিকে নিয়ে যাবে চীন এবং চীনের অর্থনীতি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ চীন সাগর বড় ভূমিকা পালন করে চলছে, চীনের বাণিজ্যের পথ সুগম করেছে এই দক্ষিণ চীন সাগর। তাই দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের নিয়ন্ত্রণ বা প্রভাব থেকে চীন কে দূরে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব হবে যদি তাইওয়ান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া চীন কে হটানো বা চীন অগ্রগতি ঠেকানোর জন্য এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বারোপ করেছে এবং বিভিন্ন জোট গঠন করতে দেখা গেছে। তাইওয়ান হলো দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। কাজেই এখানে যদি চীন তাইওয়ান নিজদের করে নিতে পারে তাহলে দক্ষিণ চীন সাগরে তাইওয়ানের প্রভার আরও সুদৃঢ় হবে বা বৃদ্ধি পাবে। আবার যদি তাইওয়ান স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তবে এখানে আমেরিকার আধিপত্য আগের থেকে বাড়বে। যদিও জাপানের সাথে ভালো সম্পর্কের কারণে এখানে আমেরিকার প্রভাব রয়েছে। তাই এ দ্বন্দ্ব চলছে, নতুন নতুন করে তাইওয়ান ইস্যু আবার গুরুত্ব পাচ্ছে, উত্তেজিত অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
যদি চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ হয় তবে এখানেও যুক্তরাষ্ট্র হয়তো সরাসরি নাও জড়াতে পারে এবং তাইওয়ান কে সহযোগিতা করে যেতে পারে। তাইওয়ান কে ইতোমধ্যে সহযোগিতা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে এটা বলা যায় অনেকটা। যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চীন ঠেকানো এবং অস্ত্র ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে এমনটা বলা যায়। কাজেই আমেরিকা হয়তো আরেকটি ফাঁদ পেতেছে চীন কে হটানো এবং চীন যাতে ফাঁদে পা দিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। এর ফলে চীনের অগ্রগতি এবং অর্থনীতি বাধাগ্রস্ত হবে। ইতোমধ্যে, চীনের বন্ধু রাষ্ট্র রাশিয়া কে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে ব্যস্ত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার ফলে এ যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
মার্কিন স্পিকারের চীন সফরের মধ্য দিয়ে তাইওয়ান ইস্যু আরও বেগবান হবে এবং আরেকটি যুদ্ধ হয়তো বিশ্ব দেখার অপেক্ষায়। যেন যুক্তরাষ্ট্র চীন কে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা চীন-তাইওয়ান যুদ্ধ আসন্ন কিনা!
✍️ মোঃ আসাদুল আমীন
শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়